Sunday, December 2, 2012

siuli


















ঝরে পড়া হৈমন্তিক পাতা দেখেছো
চোখের আধারে তবুও কাব্য নাচে বহুবার
মরিচিকা পথে স্বপ্নকে কাঁদাও অকারণে
অকারণে চারুকলায় মাতাও মনভূমি আবার
দিনমান অলিগলি ঘুরে রাজ্যের জঞ্জাল জড়ো হয়
অভিমানের পাশ কেটে কোথায় ঝরনা ঝরে
ঠিকানাহীন পত্রাবলী রচনা...একের পর এক
তারপরে অন্তরবর্তী হিমানী-সম্প্রপাত বর্ণময়



মনে আমার কেবলই যে একটাই বাসনা,
চিরনিদ্রায় যাবার তরে,চক্ষু মুদিবার কালে,
শেষাবধী পাই যেন তোমার দেখা, আমার জন্মান্তরে ।
আসুক যত মহাপ্রলয়, আসুক যত তান্ডব,
আমায় ফেলে যেও না প্রিয় , রেখনা শমনদ্বারে ।
যখন আমি দীর্ঘনিদ্রা্য় ,শায়িত মাটির পরে ।
আমায় ঘিরে থাকবে শুধুই ,তমোরাশিরা ভরে ।
তোমার উদাসীনতা দেখবো চেয়ে, হয়ে সন্ধা তারা।
জানি আমি হবনা অবলুপ্ত , তোমার মনে,
রব চির নশ্বরা ।
যখন আমি চলে যাব ,দুজনই যে হব একা ।
শত স্মৃতিচারন করবো মোরা কষ্ট হবে,
দুজনের দুদিকে থাকা।
পরম প্রশান্তি বুকে নিয়ে, যেন যেতে পারি চলে ।
অনিচ্ছাকৃত আত্মসমর্পন করি যেন,
মাথা রেখে তোমার স্বর্গকোলে ।
পৃথিবীতে সবচেয়ে ভাল লাগে প্রিয় ,
তোমার সান্নিধ্য পাওয়া ।
তোমায় নিয়ে তমালও তলে ,
স্বপ্নে বিভোর হওয়া ।
কেমন করে থাকবো প্রিয় ,
ফেলে এত ভাললাগা , এত বিভোরতা !!


নারকেল পাতার ফাঁক দিয়ে ঝিরঝিরে ভোরটা সবে তখন আড়মোড়া ভাঙছে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা আমার মধ্যেও জারিয়ে গেল রেশটা। নিজেকে পরম যত্নে আদর করার মত একটা ভাঙাচোরা ঢেউ বয়ে গেল শরীর-সৈকতে। আর হঠাত্ করেই মনে হতে লাগল, আজকের ভোরটা কি একটু বেশিই খুশি? বেশি প্রগল্ভ? পাখিগুলো যেন প্রাণখুলে ডাকছে................আরে দুর, পাখি কই, এতো কলিং বেল এর আওয়াজ, আমাকে আমার ভাবনা-গলি থেকে হাইজ্যাক করে আনার জন্য এক সুরেলা ষড়যন্ত্র! কোলাপ্সেবলের ফাঁকে গোঁজা খবরের কাগজ, কাগুজে আধারে বিশ্ব-দর্শন...............আর একটা দিনের শুরু..........
ধোঁয়াটে চা এর কাপ হাতে বসলাম দক্ষিনের বারান্দায়, হাওয়ায় অবাধ্য পর্দার ফাঁক দিয়ে দেখছি বিছানায় ফুটে আছে একটা ফুল----আমার মেয়ে, গোলাপ-রঙা লেস এর রাত-পোশাক পরে কেমন এঁকেবেঁকে ঘুমোচ্ছে। ওর হাল্কা কেঁপে ওঠা চোখের পাতা থেকে একটা তিরতিরে সুখ চারিয়ে যাচ্ছে আমার অন্দরে........
এই সকালে আমার বন্ধু একটা রাধাচূড়া গাছ, ডালপালা ছড়িয়ে সংসার পেতেছে বারান্দার পাশে। ও-ও দেখি আজ একটু বেশিই চন্চল, হয়তো কৃষ্ণের বিরূদ্ধে যত অভিযোগ সব উজাড় করে দিতে চায় আমার কাছে...........দুর পাগলী, এসব বলতে হয় নাকি? তার চেয়ে চল খুলি গেরুয়া রঙা এক বিকেলের ঝাঁপি, যাকে কবর দিয়েছি বুকে, বুকের বন্ধ ঘরে। অবশ্য রোজ সন্ধ্যাপ্রদীপ দিই। রাখালের বাঁশীর মত সে বিকেল; ছাতিম গাছের গায়ে যে কোটর, তাতে রোজ রেখে আসতাম একটা করে নাগচম্পা ফুল, অনেক ছেলেমানুষী(মেয়েমানুষী)শপথ মাখা থাকতো তার পাপড়ি। বলতে গেলে.............এই দেখো, ঝিমিয়ে পড়লি যে; কি শুনতে চাস? চৈত্রের দুপুর আর চিলেকোঠার গল্প? তাও আছে, কিন্তু সে শুনে কাজ নেই; শুনলেই বলবি, ....."হতভাগির মরণদশা হয়েছিল";....... ওসব ক্লিশে হয়ে যাওয়া হলুদ পাতা, কবেই উড়িয়ে দিয়েছি অ-কালবৈশাখীতে। আজ কিছুতেই পারবি না আমার মুখে ছায়া ফেলতে.......................এই শোন, রথের মেলায় যাবি আমার সাথে? ভাইকে নিয়ে জেঠুর সাথে যেতাম, রথতলায় বসতো রথের মেলা, পুতুলের দাম দু-টাকা বললে গম্ভীর মুখে দর করতাম, "তিনটাকায় হবে?".........উফ্ বাবা, হাসতে হাসতে চোখে জল!
মেঠো পুকুরে পানকৌড়ির সাথে সাঁতার কেটেছিস কখনো? পাখিটা আমার চারপাশে ঢেউ তুলতো। শাপলা ফুল দাঁতে চেপে এপার-ওপার; সেখানেই তো..............ভাঙা খোঁপা দিশেহারা পুকুরের জলে!!
ইস্, দেখো কি কান্ড, চা যে জুড়িয়ে জল! হ্যাঁ রে, চা এর সাথে বৃষ্টি-ফোঁটা----খেয়েছিস কোনোদিন? নাক কোঁচকাস না, বলছি সব, আগে ডায়রি থেকে বর্ষায় কাকভেজা সন্ধ্যেটাকে বের করতে দে...................শখ করে পরা শিফনের আঁচলে চোরকাঁটাদের রাজত্ব, ঠান্ডায় লাল নাকের পাটা, হোগলা পাতায় ছাওয়া দোকান থেকে কেনা বাদামী চা এর ভাঁড়.........টুপটাপ বৃষ্টির জলে গা ধুয়ে নিলো, চোখ বুজে তাতেই চুমুক; সেদিন আমার চুলে নাকি প্রথম বৃষ্টির সোঁদা গন্ধ বইছিল, দামী শ্যাম্পুর চোখ-রাঙানীতে আজকে সেসব কোনঠাসা...............
দ্যাখ্, সকালে গল্পে বসে তোকে দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যে---------সব ঘুরিয়ে আনলাম।.................কি বলছিস? রাত?? নাহ্, ওটা নাইবা শুনলি, কিছু একটা অন্ততঃ শুধুই আমার থাকতে দে..............
"মাম্মা তুমি কোথায়?"................আমার বাস্তব, আমার ভবিষ্যত আমায় ডাকছে রে, আজ যাই, কাল আবার আসিস। কাল তোর গল্প শুনব। আর হ্যাঁ শোন, পারলে কাল আমার জন্য একটা নাগচম্পা ফুল আনিস তো, বুকের সেই বন্ধ ঘরটায় রাখব।


সেদিন রাতে চাঁদকে পেয়ে অনেক কাছে
প্রশ্নটাকে ছুঁড়েই দিলাম বাতাস মুড়ে,
চাঁদনী কেন জ্বালে এমন ঠান্ডা আগুন
দাবানলের মাতন কেন হৃদয় জুড়ে?
মন-পোড়ানী মুচকি হাসি চাঁদের মুখে
চুপকথা কে জড়িয়ে নিল ঠোঁটের ভাঁজে,
রহস্যটা ঝিকিয়ে তুলে হীরের মত
অনায়াসে মুখ লুকাল মেঘের মাঝে!
চাঁদের কাছে নিরাশ হয়ে একলা আমি
দাঁড়িয়ে ছিলাম সন্ধ্যে লাগা তুলসি-তলে,
বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিল প্রদীপ-শিখা
জলরঙ্গেতে স্বপ্ন আঁকা নীল বিকেলে।
আমার চোখের কাজল ধোয়া তুই ধারাপাত
তোকেই তবে একটা শুধু প্রশ্ন করি,
আঁজলা ভরে প্রথম বরষ পরশ মেখেও
কেন আমি সর্বনাশা তৃষায় মরি?
যখন ছিলাম দুই বেনীতে ফুলছাপা ফ্রক
রাতগুলো সব চাঁদের বুড়ীর গল্পমাখা,
স্বচ্ছ সকাল, ডাহুক ডাকা দুপুরবেলা
বিকেল হলেই খেলার মাঠে স্বপ্ন রাখা!
এখন আমি ছায়াপথে একলা চলি
আমায় ঘিরে চুঁইয়ে পড়ে নির্জনতা,
পথের বাঁকে এক পলকে থমকে ভাবি
বাঁক পেরোলেই হয়ত নতুন অক্ষমতা...


No comments: