Wednesday, May 29, 2013

My Profile

My Profile 2013 comming

Monday, May 6, 2013

শ্রমিকের রক্তের টাকায় গার্মেন্টস মালিকদের বিলাসিতা


ঢাকা: পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ বাংলাদেশ। নিজেকে বিশ্বের কাছে সম্ভাবনাময়ী দেশ হিসেবে চেনাতে পেরেছে সস্তায় পরিশ্রমী শ্রমিকের সহজলভ্যতার কারণে। দরজায় তালা লাগানো কারখানায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন বাংলাদেশের পোশাক খাতের শ্রমিকরা। আগুন বা ভবন ধসে অকালে মৃত্যুর কাছে হার মানেন তারা।

শ্রমিকদের দাসের মতো খাটিয়ে নিয়ে দেওয়া হয় নামমাত্র বেতন। আর তাদের খাটুনির ফলে বিশাল অঙ্কের মুনাফাপ্রাপ্ত মালিকরা কাটান পশ্চিমা ধনকুবেরদের মতো বিলাসী জীবন। আগুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যান গার্মেন্টেসের মালিকরা।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এর একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে। ধনকুবের বনে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অনেকটা সহায়ক হিসেবে কাজ করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

উদাহরণ হিসেবে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের বৃত্তশালী হয়ে উঠার গল্প তুলে ধরেছে রয়টার্স। তিন দশক আগে মাত্র একটি কারখানা দিয়ে শুরু করেছিলেন তিনি। আজকে তিনি অনেক কারখানার মালিক, সেসব কারখানায় কর্মরত রয়েছে ২৬ হাজার শ্রমিক। বার্ষিক আয় গড়ে ২০ কোটি মার্কিন ডলার।

রাজধানী ঢাকার একটি সুরম্য বাড়িতে বাস করেন তিনি। বাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, কোলাহল থেকে নিরিবিলি রাখতে বাড়ির চারপাশে রয়েছে বিশালাকারের দেয়াল।

শ্রমিকদের বেতন না বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি জানান, পোশাক খাতে ব্যয় গত বছরগুলোর তুলনায় দ্বিগুন হয়েছে। তিনি জানান, কিন্তু পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো বেশি দাম দেয় না। এখন পশ্চিমা ক্রেতাদের বেশি দামে পোশাক কেনা উচিত।
আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ওপর দোষ চাপিয়ে তিনি বলেন, “ক্রেতারা কিছুই দিতে চান না। তারা শুধু বলে ‘উৎপাদন বাড়ান’।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে পোশাক মালিকদের বলে অভিযোগ শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের। কারখানায় আন্দোলন দমাতে গড়ে তোলা হয়েছে শিল্প পুলিশ বাহিনী। বিশ্বের সবচেয়ে কম বেতন দেওয়া হয় বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের আর ঠুনকো নিরাপত্তার মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয় তাদের।

পোশাক শিল্পের ৩০ শতাংশের বেশি মালিক পার্লামেন্টের সদস্য অর্থাৎ পার্লামেন্টের ১০ শতাংশ আইনপ্রণেতা গামেন্ট মালিক। ধসে পড়া ভবনের মালিক মো. সোহেল রানার মতো অন্যান্য মালিকদের রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক সম্পর্ক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যুব শাখার স্থানীয় নেতা সোহেল রানা।

শ্রমিকদের অধিকারের দাবি নিয়ে কাজ বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়াকার্স সলিডারিটির নেতা বাবুল আখতার বলেন, “যেকোনো ভাবে পার্লামেন্টের ৫০ শতাংশ সদস্যে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।” তিনি অভিযোগ করেন, এই রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে অনেকে আইনের তোয়াক্কা না করেই শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনও দেন না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কাছে বেশ আটতলা বিশিষ্ট ভবন ধসে পড়ার বিষয়টি সস্তা মানে বিপজ্জনক নয় এটা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ, মালিক আর ক্রেতাদের যৌথ ব্যর্থতাকে চরমভাবে স্মরণ করিয়ে দেয়। ছয় মাসের মধ্যে তৃতীয় ভয়াবহ ঘটনা রানা প্লাজার ধস। এই ভবন ধস দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ ও নিরাপত্তার প্রশ্নটিকে আরেকবার সামনে নিয়ে আসল।

বাবুলের মতো নিরাপদ কারখানা ও সম্মানজনক বেতনের জন্য আন্দোলনকারীদের দেশের শত্রু ভাবা হয় বলে মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। বলা হয়েছে, পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিলে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। গত বছর শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলামকে আন্দোলনের জন্য নিজের জীবন দিতে হয়েছে। তার হত্যার বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে এবং কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। বিক্ষুব্ধ জনতাকে উসকে দেওয়ার অভিযোগে বাবুলকেও তিন বছর আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং কারাগারে নির্যাতন চালানো হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন তালিকায় বাংলাদেশ ছিল সবার শেষে। এমনকি ২০০০ সালে বিশ্ব বাজারে পোশাক রফতানি করতে শুরু করা কম্বোডিয়ার চেয়েও কম বেতন বাংলাদেশের শ্রমিকদের।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেতন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ মালতে লুয়েবকার বলেন, “বেতনের ক্ষেত্রে কমের মধ্যে সবচেয়ে কম এটি।”

ওয়াল-মার্ট, টার্গে, এইচএ্যান্ডএম, লোব্ল, চিলডেন’স প্লেস, বেনেটন, ক্যাটো ফ্যাশনস, ম্যাঙ্গো, প্রাইমার্কের মতো বিশ্ব বিখ্যাত ব্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরি হয় বাংলাদেশে। ঝুঁকিপুর্ণ পরিবেশ কাজ করা শ্রমিকদের বেতন দৈনিক দুই ডলারের চেয়ে কম। বাংলাদেশ তিন হাজার ৫০০ পোশাক কারখানা রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ৬০ শতাংশ ইউরোপ, আর ২৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করা হয়। বাংলাদেশের রফতানির ৮০ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে।

গোল্ডম্যান সাশের দেওয়া তথাকথিত ‘পরবর্তী এগার’ তে রয়েছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশেরও সম্ভাবনা রয়েছে চলতি শতকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভাবের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পাওয়ার পর আজকের এই অবস্থানে আসতে বাংলাদেশে দুর্নীতি, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে দেশটির পোশাক খাত ব্যাপক অবদান রেখেছে।
১৬ কোটি মানুষের এই দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে অনেকেই পোশাক মালিক ও তাদের সংশ্লিষ্টদের আঁড়চোখে দেখেন। পশ্চিমা খুচরা বিক্রেতারা শক্তিশালী হতে পারেন,কিন্তু পোশাক মোগলদের তুলনায় তারা কিছুই নয়।